- মঙ্গলবার ২১ মে ২০২৪

| জ্যৈষ্ঠ ৭ ১৪৩১ -

Tokyo Bangla News || টোকিও বাংলা নিউজ

ইউক্রেন যুদ্ধ : রাশিয়ার আসল উদ্দেশ্য কি?

আবুল হোসেন খোকন

প্রকাশিত: ১১:৫৭, ১৮ মে ২০২২

ইউক্রেন যুদ্ধ : রাশিয়ার আসল উদ্দেশ্য কি?

রাশিয়া তার প্রতিবেশি দেশ ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে গত ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ থেকে। অভিযান এখনও চলছেই। অর্থাৎ ইউক্রেন থেকে ‘নাৎসীবাদ’ নিমূর্ল, তথা শাসক প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি গোষ্ঠীকে ধ্বংস করতে প্রায় তিন মাস ধরে রাশিয়া তার সর্বশক্তি নিয়োগ করেও সফল হয়নি। যে কারণে যুদ্ধ চলছেই। শুধু তাই-ই নয়, দেখা যাচ্ছে- যুদ্ধক্ষেত্রে রাশিয়ার বাহিনী অগ্রসরও যাচ্ছে, আবার প্রায়ই পিছু হটছে, অথবা যুদ্ধে বিফল হচ্ছে।এখন পরাশক্তি হিসেবে সোভিয়েত ইউনিয়ন না থাকলেও এই বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের বিপরীতে পরাশক্তি হিসেবে ধরা হয় রাশিয়াকে। কারণ তাদের হাতে কোন কোন ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের সমান অথবা কোন কোন ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে বেশি পরিমান অত্যাধুনিক সামরিক সাজ-সরঞ্জাম রয়েছে। এই সাজ-সরঞ্জামের অন্যতম পারমানবিক অস্ত্র। চাইলেই তারা বিশ্বযুদ্ধ বাধিয়ে এই পৃথিবীকে ধ্বংসের জায়গায় নিয়ে যেতে পারে।

এই হিসেব অনুযায়ী, রাশিয়া যখন তার দুর্বল প্রতিবেশি দেশ ইউক্রেনের উপর সর্বাত্মক (জলপথে, আকাশ পথে) সামরিক অভিযান শুরু করে, তখন মনে করা হয়েছিল- দিন দুয়েকের মধ্যে ইউক্রেনের জেলেনস্কিসহ তার তাবৎ শক্তি-সামর্থ ধ্বংস হয়ে যাবে। রাশিয়ার পূর্ণ দখলে চলে যাবে ইউক্রেন। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, সে রকম কিছু তো ঘটেইনি, বরং যুদ্ধের জয়-পরাজয় সমানে সমান অবস্থায় রয়ে গেছে। রাশিয়া ইউক্রেন দখল করতে পারেনি, জেলেনস্কি সরকারকে হটাতে পারেনি,এমন কি জেলেনস্কিকে আত্মগোপন অব¯’ায়ও নিয়ে যেতে পারেনি। এইসঙ্গে যুদ্ধে রাশিয়া অফিসারসহ বহু সেনা হারিয়েছে, সামরিক ক্ষেত্রে অনেক ক্ষয়-ক্ষতির শিকার হয়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, ইউক্রেন পক্ষেরও ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে।

এটা, একটি যুদ্ধের স্বাভাবিক ব্যাপার, ক্ষয়-ক্ষতি উভয় পক্ষেরই হয়ে থাকে। একটি সাধারণ যুদ্ধের ফলাফলের মত এখানে সেটাই হয়েছে। কিন্তু রাশিয়ার মত পরাশক্তি
ক্ষমতাসম্পন্ন একটি দেশের ক্ষেত্রে কি এটা স্বাভাবিক?মোটেই তা নয়। বরং রাশিয়ার মত শক্তির সঙ্গে যুদ্ধে ইউক্রেনের সত্যই দুদিনের বেশি টিকে থাকার কথা ছিল না, হোক না তারা যতোই পশ্চিমা সামরিক সাহায্যপুষ্ট।

যুদ্ধে জেলেনস্কি সরকার তো দুরে থাক- তাদের সবকিছু ধুলিস্মাৎ হয়ে যাবার কথা। কিন্তু‘ বাস্তবে তা হয়নি। আর হয়নি বলেই তৈরি হয়েছে প্রশ্ন, তৈরি হয়েছে
রহস্যও।কারণ, এই যুদ্ধ নিয়ে রাশিয়ার বিরুদ্ধে পশ্চিমা দেশগুলোর কৌশলগত যতো রকম শক্তি-সামর্থ্য বা নিষেধাজ্ঞার অস্ত্র ব্যবহার করার কথা- তার সবই করা হয়েছে। রাশিয়ার উপর যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ থেকে শুরু করে ‘গণশত্রুতামূলক’ যতো কলঙ্ক তিলক রয়েছে- তারও সব চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। সুতরাং তাদের হারাবার আর কিছু নেই। তাদের ‘লজ্জা’ পাবারও আর কিছু নেই। এই যদি হয় তাহলে- তারা ইউক্রেন যুদ্ধে বিজয়ী হওয়ার জন্য সবই করতে পারে, বা পারতো। যেমন ইউক্রেন দখল করতে বড় মাপের বোমা মেরে ধ্বংস করে দিতে পারতো কিয়েভসহ জেলেনস্কি গোষ্ঠীকে। ব্যবহার করতে পারতো পারমানবিক অস্ত্র বা অনুরুপ শক্তির মত সামরিক ক্ষমতা। জলপথ, নৌপথ বা আকাশপথ ব্যবহার করে যে এসব ক্ষমতা ব্যবহার করার ঝামেলা ছিল- তাও নয়। এগুলো মস্কোয় বসে আঙ্গুলের ছোঁয়ায়-ই করা যেতো বা যায়। অথচ অদ্ভুৎ ব্যাপার, এ সবের কিছুই করেনি রাশিয়া। করার কোন লক্ষণও নেই। তাহলে? তাহলে কেন, কোন্ধসঢ়; উদ্দেশ্যে ইউক্রেনে হামলা চালিয়ে যুদ্ধকে এভাবে চলমান রাখা হলো? যুদ্ধের জেরে বিশ্বব্যাপী কেন নানা ক্ষেত্রে সংকট ও জটিলতা তৈরি করা হলো? এতোকিছুর পরও কেন এই যুদ্ধকে শেষ করা হচ্ছে না?

এসব প্রশ্ন কিন্তু‘ এখন সবার মাঝে। মজার ব্যাপার হলো- রাশিয়া যে পথে রয়েছে,একই পথ বেছে নিয়েছে পশ্চিমারাও। তারাও তো রাশিয়াকে এই সুযোগে আঘাত করা বা থামানোর জন্য জন্য ‘বড়’ কোন সামরিক পদক্ষেপ নিতে পারতো। পারতো যুদ্ধে সরাসরি নেমে পড়তে। কিংবা পারতো ইউক্রেন বা জেলেনস্কি সরকারকে
‘ভয়ঙ্কর অস্ত্রশস্ত্র’ দিয়ে সহযোগিতা করতে, যাতে করে ইউক্রেন বাহিনী রাশিয়াকে হটিয়ে মস্কোর দিকে ধেয়ে যেতে পারে। কিš‘ এ কাজটিও করেনি পশ্চিমা শক্তি। তারা জেলেনস্কি সরকারকে এমনভাবে সহায়তা করছে যাতে- তারা না পারে ‘মরে’ যেতে, না পারে ‘জয়ী’ হতে। সুতরাং এখানেও একটি জটিল রহস্য,বা প্রশ্ন। হয়তো একটা সময় এসব প্রশ্নের বা রহস্যের উত্তর বেরিয়ে আসবে।তবে এখন মানুষ ধাঁধাঁয় রয়েছেন। গোটা বিশ্বকেই ধাঁধার মধ্যে আটকে ফেলা হয়েছে।

আপাতত মনে হতে পারে- তাহলে কি রাশিয়া আর যুক্তরাষ্ট্র বা ন্যাটো কোন গোপন সমঝোতায় চলছে। অর্থাৎ তারা এই শান্তির বিশ্বে একটি যুদ্ধক্ষেত্র তৈরি করে দিয়েছে? আর এই যুদ্ধক্ষেত্রের বাজার থেকে যে যার মত হাতিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে? যেমন যুক্তরাষ্ট্রকে তেলের বাজার থেকে লুটপাটের সুযোগ করে
দেওয়া হয়েছে, সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে অস্ত্র ব্যবসার? কিংবা এই যুদ্ধের অজুহাতে একদিকে সামরিক, আরেকদিকে অর্থনৈতিক হরিলুট ছাড়াও গোষ্ঠীগত সদস্য বাড়ানোর প্রতিযোগিতা তৈরি করে কোন মতলব বাস্তবায়ন করা হচ্ছে? কারণ ন্যাটোও নানা চাপ এবং কৌশল প্রয়োগ করে সদস্য বাড়াচ্ছে, রাশিয়াও পরিস্থিতিকে ব্যবহার করে অনুরুপ স্বার্থ হাসিল করার পথ বেছে নিয়েছে? এটা কি উভয়পক্ষের সমঝোতা বা ক‚টকৌশলের ফসল? সত্যিই এরকম কিছু যদি হয়ে থাকে, তাহলে বলতেই হবে- ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার উদ্দেশ্য ছিল ‘দেশটিকে দখল করা নয়’। উদ্দেশ্য অন্য কিছু ছিল, বা রয়েছে। আসল উদ্দেশ্যটাই এখন প্রকাশ হওয়া জরুরি। তবে এটা পরিস্কার, রাশিয়াও যেমন ইউক্রেন যুদ্ধ জিইয়ে রাখতে চাইছে, বিপরীতে পশ্চিমা মহল বা যুক্তরাষ্ট্রও তাই-ই চাইছে। এর প্রতিফলনই আমরা দেখতে পাচ্ছি  রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে।

আবুল হোসেন খোকন : লেখক, সাংবাদিক ও প্রামাণ্য চলচিত্র নির্মাতা।  
 

আর সি

"এই বিভাগে প্রকাশিত মুক্তমতের সকল দায়ভার লেখক নিজেই। টোকিও বাংলা নিউজ কোনভাবেই এই বিভাগে লেখক কিংবা ‌লেখার বিষয়বস্তুর দায়ভার নিচ্ছে না।"