![প্রায় অর্ধ শতাব্দী পর অনুষ্ঠিত হবে জাতিসংঘ পানি সম্মেলন প্রায় অর্ধ শতাব্দী পর অনুষ্ঠিত হবে জাতিসংঘ পানি সম্মেলন](https://www.tokyobanglanews.com/media/imgAll/2021September/un-water-2303041235.jpg)
চলতি মাসের ২২ মার্চ বিশ্ব পানি দিবস। আন্তর্জাতিকভাবে এবারের দিবসটি পাচ্ছে নতুন মাত্রা। দিনটিতে জাতিসংঘে তিন দিনব্যাপী আয়োজন হচ্ছে ‘ওয়াটার কনফারেন্স’। ২২ মার্চ নিউইয়র্কে জাতিসংঘের প্রধান কার্যালয়ে উদ্বোধন হবে বৈশ্বিক এই আয়োজনের। সমাপনী অনুষ্ঠান হবে ২৪ মার্চ।
টানা ৪৬ বছর পর অনুষ্ঠেয় এই সম্মেলন থেকেই আসবে শক্তিশালী ওয়াটার অ্যাকশন এজেন্ডা, থাকবে স্টেকহোল্ডারদের প্রতিশ্রুতি। বাংলাদেশ থেকে সরকারি উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল যোগ দেবে এই সম্মেলনে। এর আগে ১৯৭৭ সালে আর্জেন্টিনার মার ডেল প্লাতায় হয়েছিল সর্বশেষ পানি সম্মেলন। সেদিক থেকে এবারের সম্মেলনে বিশ্বের অনেক দেশের রয়েছে বাড়তি মনোযোগ।
আয়োজক পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সম্মেলনের প্রাথমিক লক্ষ্য—বৈশ্বিক পানি সংকট নিয়ে সচেতনতা সৃষ্টি এবং পানি সম্পর্কিত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জনে আন্তর্জাতিকভাবে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা। পাশাপাশি সম্মেলনের মূল লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে—একটি শক্তিশালী ‘ওয়াটার অ্যাকশন এজেন্ডা’ তৈরি করা, যা জাতিসংঘের সদস্য দেশ ও স্টেকহোল্ডারদের প্রতিশ্রুতিকে উপস্থাপন করবে।
সম্মেলনকে সামনে রেখে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, মার্চে অনুষ্ঠেয় ‘জাতিসংঘের পানি সম্মেলন ২০২৩’-এ অবশ্যই জোরালো ‘ওয়াটার অ্যাকশন এজেন্ডা’ গ্রহণ করতে হবে। যা আমাদের বিশ্বের অস্তিত্বের প্রাপ্য প্রতিশ্রুতি দেবে।
২০২২ সালের জুলাইয়ে ওয়াটার কনফারেন্সের সহ-আয়োজক নেদারল্যান্ডস এবং তাজিকিস্তানের প্রস্তাবের ভিত্তিতে পানি সম্মেলনের পাঁচটি থিম নির্ধারণ করা হয়। পরে ওই বছরের অক্টোবরে প্রস্তুতিমূলক সভায় জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলো প্রস্তাবগুলোতে সম্মতি দেয়।
থিম পাঁচটি হচ্ছে—ওয়াটার ফর হেলথ; ওয়াটার ফর ডেভেলপমেন্ট; ওয়াটার ফর ক্লাইমেট, রেজিলেন্স অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট; ওয়াটার ফর কো-অপারেশন এবং ওয়াটার অ্যাকশন ডেকেড। সম্মেলনে একটি উদ্বোধনী ও সমাপনী সেশনের পাশাপাশি ছয়টি পূর্ণাঙ্গ সেমিনার, পাঁচটি অংশগ্রহণমূলক সভা হবে। এরপর সম্মেলনের অনুমোদিত ডকুমেন্টের ভিত্তিতে একটি সারাংশ জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সভাপতির মাধ্যমে প্রস্তুত করা হবে।
সম্মেলন প্রসঙ্গে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘এবারের সম্মেলনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সম্মেলনে অনেক জরুরি বিষয় উঠে আসবে। পানির ব্যবহার, আইনি বিষয় নিয়ে সম্মেলনে নানা সেশন হবে, আলোচনা হবে। এজন্য পাঁচটি থিম নির্ধারণ করা হয়েছে। এবারের সম্মেলনটি বড় ধরনের আয়োজন—এতে ‘ওয়াটার অ্যাকশন এজেন্ডা’ আসবে, যার মধ্য দিয়ে এসডিজি-৬ অর্জনে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি আসতে পারে।’
জানতে চাইলে সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসেস (সিইজিআইএস)-এর নির্বাহী পরিচালক মালিক ফিদা আবদুল্লাহ খান বলেন, ‘১৯৭৭ সালের পর এই প্রথমবারের মতো ওয়াটার সম্মেলন হচ্ছে, এটার গুরুত্ব অনেক বেশি। অনেক ইস্যু নিয়ে সম্মেলনে অন্তত শতাধিক সাইড ইভেন্ট হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিকে হচ্ছে— এবারের সম্মেলনটি কেবল একটি সম্মেলন নয়, এই আয়োজন থেকে কার্যকর একটি প্রতিশ্রুতি চাইবে জাতিসংঘ।’
‘বিশেষভাবে সহ-আয়োজক নেদারল্যান্ডস ও তাজিকিস্তান চাইছে—যেসব কান্ট্রি এই বিষয়ে (পানি ও নদীকেন্দ্রিক দূষণ) বিশেষভাবে চায় না, তাদেরও আলোচনার মধ্যে নিয়ে আসা। আর জাতিসংঘ চায় সদস্য দেশগুলোর পক্ষ থেকে যে প্রতিশ্রুতিই দেওয়া হোক, সেসব যেন বাস্তবায়ন করা হয়।
সত্যিকার অর্থে সরকারি, বেসরকারি, সিভিল সোসাইটিসহ ইনক্লুসিভ কমিটমেন্ট থাকবে’ বলে উল্লেখ করেন মালিক ফিদা আবদুল্লাহ খান।
‘এজন্য প্রতিটি দেশই এবার প্রেসারে থাকবে’ বলেও জানান ফিদা আবদুল্লাহ খান।
পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, জাতিসংঘে অনুষ্ঠেয় পানি সম্মেলনে বাংলাদেশের উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল অংশ নেবে। এতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক, সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসেস (সিইজিআইএস)-এর নির্বাহী পরিচালক মালিক ফিদা আবদুল্লাহ খান প্রমুখ থাকতে পারেন। তবে, সরকারিভাবে কৃচ্ছ্র সাধনের জন্য বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সম্মেলনে যাচ্ছেন না বলেও এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘আমরা এই সম্মেলনে অংশগ্রহণ করবো। আমাদের দেশটা নদীমাতৃক। সারা দেশে ছড়িয়ে আছে ৮৫৭টি নদী। পানি আমাদের জীবন। কিন্তু পানি দূষিত হচ্ছে। ভারত মহাসাগর দূষিত। পানিকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। আমাদের বেঁচে থাকার যে আয়োজন, তা বাঁচাতে হলে পানিকে বাঁচাতে হবে। আবহাওয়া রক্ষা করতে চাইলে পানিকে রক্ষা করতে হবে। জাতিসংঘের পানি সম্মেলন বড় আয়োজন। আমরা এতে যোগ দেবো।’
সম্মেলনে বাংলাদেশের অবস্থান কী হতে পারে, এমন প্রশ্নে পররাষ্ট্রমন্ত্রী উল্লেখ করেন, পৃথিবী উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। আমরা সমুদ্রের কিছু অংশ প্রটেক্টিভ এলাকা হিসেবে নির্ধারণ করেছি। সরকার চেষ্টা করছে—সবাই যেন বিশুদ্ধ পানি পায়। এটা বাস্তবায়ন করতে হবে। আমরা সম্মেলনে চেষ্টা করবো—কীভাবে আরও সহযোগিতা-প্রাপ্তির মধ্য দিয়ে আমাদের পানিপ্রাপ্তি নিশ্চিত করা সম্ভব হয়।’
সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসেস (সিইজিআইএস)-এর নির্বাহী পরিচালক মালিক ফিদা আবদুল্লাহ খান জানান, ওয়াটার কনফারেন্সে অন্তত শতাধিক সাইড ইভেন্ট থাকবে। বাংলাদেশও একটি সাইড-ইভেন্ট করবে। এই সেশনে নদী থেকে সমুদ্র, নদীর দূষণ, পানিসহ প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলো আলোচনায় উঠে আসবে।
এম কে এম