- মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪

| বৈশাখ ১৭ ১৪৩১ -

Tokyo Bangla News || টোকিও বাংলা নিউজ

সুখ (পর্ব-২)

সানজিদা ইসলাম সেতু

প্রকাশিত: ০৭:১০, ১৪ এপ্রিল ২০২২

সুখ (পর্ব-২)

(গত পর্বে ছিলো, দীপ্তির চিঠি পড়ে রিসাদ দীপ্তিকে কল দিচ্ছে, কিন্তু ফোন রিসিভ করছেনা। কারণ রিতা ফোন মিউট করে রাখছিলো। তারপর..........)

 অনবরত ফোন দিয়ে যাচ্ছে রিসাদ। অফিসের সামনে দাড়িয়ে আছে  এই অপেক্ষায় যে কখন দীপ্তি অফিসে আসবে। দীপ্তি আদৌও আসবে কিনা তা নিয়েও বেশ সংসয়ে আছে রিসাদ। কারন দীপ্তি স্বাধীনচেতা মেয়ে। নিজের স্বীদ্ধান্তে ও বরাবরই অটল। এ নিয়ে বিয়ের আগে ও পরে অনেক কথা-কাটাকাটি হয়।

রিতাঃ  'দীপ্তি, এই দীপ্তি ওঠ এবার।'

দীপ্তিঃ  'হ্যাঁ, বলো আপু।'

রিতাঃ 'খাবি চল। অনেক বেলা হয়ে গেছে।  আমি জানি তুই অনেকটা সময় না খেয়ে আছিস। এ অবস্থায় খালি পেটে থাকা একদম উচিৎ না।'

দীপ্তিঃ 'অনেক বেলা হল তাই না আপু। অফিসের জন্য দেরি হয়ে গেলো।'

 রিতাঃ 'আজ কোনো অফিস নয়। আমি অফিস থেকে দুজনেরই ছুটি নিয়ে নিয়েছি। আচ্ছা দীপ্তি শুন
 'একটা সত্যি কথা বলবি?

দীপ্তিঃ 'হ্যাঁ বলব।'

রিতাঃ 'তুই ডিভোর্স পেপারে সিগনেচার কেনো করলি?'

দীপ্তিঃ 'শান্তি চেয়েছি, সুখ চেয়েছি তাই'

 রিতাঃ 'কিহ!!'

দীপ্তিঃ  'হ্যাঁ। নিজের আত্মসম্মান বিসর্জন দিয়ে কি বেঁচে থাকা যায় আপু। রিসাদের সাথে সম্পর্কটা ঠিক রাখার অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু কোনো কিছু কি আর এক তরফা হয় বলো। ওপাশ থেকে কোনো পজিটিভ রেসপন্স পাই নি, পেয়েছি বিরক্তি মনোভাব, অপমান আর কষ্ট।'

রিতাঃ 'আমার মনে হয় না কোর্ট তোদের ডির্ভোর্সের অ্যাপ্লাই  গ্রহণ করব। কোনো মেয়ে প্রেগন্যান্ট থাকলে এবং ডিভোর্স এপ্লাই করলে কোর্ট তা গ্রহণ করে না।'

 দীপ্তিঃ 'তা আমি বুঝে নেবো আপু। তোমার চেনা কোনো ভালো এডভোকেট আছে?'

রিতাঃ 'আছে। কিন্তু তা দিয়ে তুমি কি করবে?'

দীপ্তিঃ 'বলব। আগে তার ঠিকানা দেও। আমি তার সঙ্গে কথা বলতে চাই।'

রিতাঃ 'আচ্ছা দেবো। এখন চল।'

দীপ্তিঃ 'হুম'

 অনেকটা সময় গেটের বাইরে দাড়িয়ে থাকে রিসাদ, কিন্তু দীপ্তি আসে না। অনেক অনুরোধের পর গেটের দারোয়ান রিসাদকে ভিতরে যেতে দেয়। পুরো অফিস খুঁজেও দীপ্তিকে পাওয়া যায় না। সবার কাছে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রীতা দীপ্তির ছুটি করিয়েছে। অফিস থেকে রীতার ঠিকানা নিয়ে রিদাদ ওর বাড়িতে যায়।
 
 দুবার বেল বাজানোর পর দরজা খুলে বের হয়  দীপ্তি। দীপ্তি অবাক রিসাদকে এখানে দেখে আর রিসাদ খুশি দীপ্তিকে দেখে, ওর চোখে মুখে খুশির ঝলক।
 'ওহ দীপ্তি, তুমি এখানে।'
 রিসাদ দীপ্তিকে জড়িয়ে ধরে.. দীপ্তি রিসাদকে সরিয়ে দেয়।

দীপ্তিঃ 'তুমি এখানে কেনো রিসাদ?

রিসাদঃ 'তোমাকে নিতে এসেছি।'

দীপ্তিঃ 'মানে?'

রিসাদঃ 'প্লিজ দীপ্তি ফিরে চলো তুমি,নতুন মানুষের সাথে নতুন করে সবটা শুরু করি।'

 রিসাদের কথায় হেসে দেয় দীপ্তি,  বলে.
 'নতুন মানুষের সাথে নতুন করে সবটা শুরু করবে বলেই তো তোমাদের মাঝ থেকে  আমি চলে এসেছি। আমি খোঁজ নিয়েছি খুব তাড়াতাড়ি আমাদের ডিভোর্স হয়ে যাবে। তারপর তুমি তোমার মতো আমি আমার মতো।'

রিসাদঃ 'প্লিজ দীপ্তি আমাকে আমার সন্তানের থেকে আলাদা কর না।'

দীপ্তিঃ 'প্লিজ রিসাদ, তোমার সাথে এ সব ব্যাপারে কথা বলকে আমার ভালো লাগছে না।'

রিসাদঃ 'দীপ্তি তুমি যা বলবে আমি তাই করব, তবুও তুমি চলো আমার সাথে।'

দীপ্তিঃ 'আমাদের ডিভোর্সের পর রিয়াকে বিয়ে করে সুখে থাকো।'

রিসাদঃ 'রিয়া মানে?

দীপ্তিঃ 'ও, আমার প্রেগন্যান্সির খবর পেয়ে রিয়াকে ভুলে গেলে? তুমি না ওকে ভালবাসো?
 আমার অনেক কাজ পরে আছে রিসাদ, তোমার সাথে বাকি কথা নাহয় কোর্টেই হবে।'

রিসাদঃ 'তুমি আমাকে আমার সন্তানের থেকে আলাদা করতে পারো না।'

দীপ্তিঃ 'তুমি অনেক আগেই আলাদা হয়ে গেছো,নতুন করে আলাদা করার বা আলাদা হবার কোনো প্রশ্নই উঠে না।'

রিসাদঃ 'বেশ তবে তাই হোক, সব কথা কোর্টেই হবে।'

 রিসাদ চলে যায়। দরজায় দাড়িয়ে বাঁধ না মানা  চোখের পানি মুছে নেয় দীপ্তি, যতই হোক রিসাদকে ভালোতো বেসেছিলো, হয়তো এখনো ভালোবাসে।
 পিছন ঘুরতেই দেখে রীতা দাড়ানো। স্বাভাবিক ভঙ্গিতে এগিয়ে যায়।

রিতাঃ 'তোর থেকে এটা আশা করি নি রে।'

দীপ্তিঃ 'দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে কিছু করার থাকে না আপু । কতটা মানুষিক যন্ত্রণা দিয়েছে ও আমাকে। মানুষিক শান্তি বলে কিছু আছে, যা আমি রিসাদের কাছ থেকে পাইনি।
'
রিতাঃ 'সব ঠিক হয়ে যাবে,চিন্তা করিস না। এতটা প্রেশার নিস না, পুচকুর কষ্ট হবে।'

 দীপ্তিঃ 'পুচকু কে আমি আমার থেকে দূরে যেতে দেবো না। ওই এখন আমার একমাত্র সম্ভল, বাঁচার একমাত্র আশা, আমার সবটা।'

 নির্দিষ্ট তারিখে কোর্টে উপস্থিত হয় রিসাদ আর দীপ্তি।  রিসাদ বাচ্চার জন্য সব করতে পারে বলে দীপ্তিকে বাইরে হুমকি দিয়ে এসেছে।  দীপ্তি কিছু না বলে চলে আসে।
 দীপ্তির পক্ষের উকিল কোর্টে পুরো তাক লাগিয়ে দিয়েছে। রিসাদ আর রিয়ার ব্যাপারে সব কথা জজের সামনে বলেছে। ডিভোর্স পাওয়ার জন্য যা যা করা দরকার দীপ্তি আর উকিল তাই তাই করেছে। অবশেষে তাই হয়েছে,  রিসাদ আর দীপ্তির ডিভোর্স হয়েছে। জজ এটাও বলেছে, দীপ্তি না চাইলে রিসাদ বাচ্চার উপর কোনো দাবি করতে পারবে না।
 জজের রায় শুনে অসহায় দৃষ্টিতে দীপ্তির দিকে তাকায় রিসাদ। এবারও দীপ্তি কিছু না বলে চলে যেতে চায় কিন্তু রিসাদ দীপ্তির পথ আটকে দাড়ায়।

রিসাদঃ 'আমার থেকে আমার সন্তানকে কেড়ে তুমি বড় ভুল করলে দীপ্তি। এর মাশুল তোমাকে দিতে হবে।

দীপ্তিঃ 'ভুলের কথা যদি বলেই থাকো তাহলে আমি বলব, তুমি আমার থেকে আমার সুখ কেড়ে নিয়েছো,আমার ভালোবাসা কেড়ে নিয়েছো, বিশ্বাস কেড়ে নিয়ছো। আমাদের ৬ বছরের ভালোবাসার সম্পর্ক তুমি এক চুটকিতে ভুলে গেছো। তো একবার ভেবে দেখো তোমার করা কাজ গুলো আমার করা কাজের তুলনায় একেবারে তুচ্ছ। তাছাড়া আমি চাইনা আমার সন্তান কোনো  বিশ্বাসঘাতক, দুশ্চরিত্র মানুষের ছত্রছায়ায় বেড়ে উঠুক। আমার সন্তানের ভালোর জন্য যা যা করতে হবে আমি তাই করব, কেউ আটকাতে পারবে না।'

রিসাদঃ 'ব্যাস দীপ্তি, অনেক বলেছো আর না। আমার সন্তান নিজে থেকে আমার কাছে আসবে আর তুমি শুধু তা চেয়ে দেখবে, কথাটা মনে রেখো।'

দীপ্তিঃ 'এবারও তুমি আমার কাছে হারবে রিসাদ। তোমার প্রথম হারের কথা মনে আছে?, আমার যখন ১ম চাকরির অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার আসে তুমি তখনও বেকার। আমাকে তুমি চাকরিতে যেতে দিতে চাও নি, আমাকে উপরে উঠতে দিতে চাও নি। বলেছিলে, এসব করার দরকার নেই। কিন্তু আমি হাল ছাড়ি নি, আজ আমার স্যালারি তোমার চেয়ে বেশি। এটাই তোমার প্রথম হার। পরবর্তী হারের জন্য মানুষিক  ভাবে তৈরী হও।'
 রিসাদ দীপ্তির কথা শুনে রেগে চলে যায়।
 
 রিসাদ যেতেই রীতা এসে দীপ্তির কাঁধে হাত রাখে। চোখে থাকা দু ফোঁটা পানি মুছে ঘুরে যায় দীপ্তি।

রিতাঃ 'তুই এ শহর ছেড়ে দূরে কোথাও চলে যা। রিসাদের চোখে আমি হিংস্রতা দেখেছি, ও যা খুশি করতে পারে, প্লিজ তুই চলে যা এখান থেকে।
 '
 রীতার কথায় দীপ্তি জোরে হেঁসে ওঠে, আশেপাশের সবাই দীপ্তির দিকে তাকিয়ে আছে। যে মেয়েটার কিছুক্ষণ আগে বিবাহবিচ্ছেদ হলো, সে মেয়েটা এখন কোর্টের বাইরে দাড়িয়ে জোরে জোরে হাসছে। দৃশ্যটা সবারই দৃষ্টিকটু লাগছে, সাথে রীতারও। দূরে গাছের আড়ালে দাড়িয়ে সবটা দেখছে রিসাদের সেই গার্লফ্রেন্ড রিয়া,, ও বুঝতে পারছেনা দীপ্তির মাথায় কি চলছে। রিয়াকে দীপ্তি দেখেও না দেখার ভান ধরে আছে

রিতাঃ 'এমন পাগলের মতো হাসছিস কেনো তুই?'

দীপ্তিঃ 'এখানে উপস্থিত কেউ একজন বোঝার চেষ্টা করছে আমার মাথায় কি চলছে, কিন্তু সে জানে না আমি মাথা নয় মন দিয়ে খেলছি।'

রিতাঃ 'তোর কথার মাথামুণ্ডু কিছুই বুঝতে পারছিনা।'
 'চল, বাসায় যাই।'

 রিয়া এবার রিসাদের কাছে গেলো।

রিয়াঃ 'রিসাদ তুমি বাচ্চার পিছনে পরে আছ কেনো? যত নষ্টের গোড়া ওই দীপ্তি,  ডিভোর্স হয়ে যাবার পরও জ্বালিয়ে মারছে।
 রিসাদ একটা কথা বলতো, তুমি বাচ্চাটার কাষ্টাডি চাও কেনো?'
 
রিসাদঃ তার কারণ দীপ্তি 

রিয়াঃ মানে?

রিসাদঃ 'হ্যাঁ দীপ্তি, দীপ্তি আমার জেদ বাড়িয়ে দিয়েছে। আমি কিছুতেই ওর কাছে হারতে পারবো না, কিছুতেই পারবো না। আমার সন্তানকে আমার থেকে দূরে রাখার জন্য ও যা করলো, তা আমি মানতে পারছিনা রিয়া। ও আমার ইগোতে আঘাত করেছে। এতো সাহস হয় কি করে ওর?'

 রিয়াঃ 'আমার মনে হয় তুমি একটু বেশিই ভাবছো রিসাদ। দীপ্তি আমাদের দুজনের মাঝ থেকে চলে গেছে, এবার আমাদের এক হতে কেউ বাঁধা দিতে পারবে না। প্লিজ তুমি এসব ভাবনা বাদ দাও। 
 তাছাড়া আমি দীপ্তির কোনো কিছু নিয়া আমার নতুন জীবন শুরু করতে পারব না, বাচ্চা তো অবশ্যই না।'

 রিসাদঃ এসব কি বলছো তুমি রিয়া?

রিয়াঃ 'হ্যাঁ, এবার তুমি ডিসিশন নাও কাকে চাই তোমার? আমি নাকি ওই বাচ্চা? '

রিসাদঃ 'রিয়া তুমি এমন বলতে পারো না। বাচ্চাটা কিন্ত আমার অংশ।

রিয়াঃ বেশ তবে তুমি তাই নিয়ে থাকো। যদি কোনো দিন বাচ্চার ভুত মাথা থেকে নামে, তখন আমার সাথে যোগাযোগ করিও।'

রিসাদঃ 'রিয়া ওয়েট, ঠিক আছে আমি বাচ্চার কথা ভাবব না। প্লিজ তুমি যেও না।
 
রিসাদ মনে মনে বলে, সরি রিয়া, তোমাকে মিথ্যা বলতে হলো। আমি আমার সন্তানকে নিজের থেকে দূরে রাখতে পারবোনা আর তা চাইও না। তার থেকে বড় কথা আমি দীপ্তির কাছে হারতে পারবো না। আমাকে সে বিশ্বাসঘাতক বলেছে দুশ্চরিত্র বলেছে। এসব আমি কিছুতেই বরদাস্ত করতে পারব না। আরতো মাত্র কয়েকটা মাস তারপর আমার সন্তান আমার কাছে।'

এদিকে দিন দিন নিজের অস্তিত্ব প্রমান করছে দীপ্তির সন্তান। পেট অনেকটা ফুলে গেছে, খাবার খেতে কষ্ট হয়,ঘুমাতে পারে না, চলাফেরায় কষ্ট হয়।
 দীপ্তি অনেক আগেই রীতাকে বলেছিলো, সে রিতার বাড়ি ছেড়ে অন্য কোথাও থাকবে। রিতা কিছু না বলে অভিমান করে দুই বেলা না খেয়ে ছিলো। এর পরে দীপ্তি এ ব্যাপারে আর কোনো কথা বলে নি।

 বড় বোনের মতো দীপ্তিকে আগলে রেখেছে রিতা ।  দীপ্তির মা বাবা মেয়ের এমন অবস্থাতে আর মুখ ফিরিয়ে থাকতে পারেনি। তারা অবশ্য চেয়েছিলো মেয়েকে তাদের সাথে নিয়ে যেতে কিন্তু রিতা দেয় নি। এতে বাবা মায়ের কোনো সমস্যা হয়নি, তারা প্রায়ই  আসে দীপ্তিকে দেখতে। এখন রিতা তাদের বড় মেয়ে।
 এমন অবস্থায় মুড সুইং হয় তা সবার জানা। পুরনো স্মৃতি, পুরনো ঘা মাঝে মাঝে কাঁচা হয়ে আসে,যা মৃত্যু যন্ত্রনার সমান। তাও সবটা সহ্য করে নেয় দীপ্তি।
 বাঁচতে হবে, ভালো থাকতে হবে, নিজের জন্য না হলেও নিজের সন্তানের জন্য।

 এগিয়ে আসছে নতুন অথিতির পৃথিবীতে আসার দিন। আর অপর দিকে রিসাদের মাথায় বাসা বাঁধছে নিজের ইচ্ছে চরিতার্থ করার নতুন প্ল্যান।

চলবে........

আর এ