- শনিবার ১৮ মে ২০২৪

| জ্যৈষ্ঠ ৩ ১৪৩১ -

Tokyo Bangla News || টোকিও বাংলা নিউজ

আফ্রিকার সবচেয়ে বিপজ্জনক ও ভয়ংকর সাপ ব্ল্যাক মাম্বা

টোকিও বাংলা নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ০০:৫৫, ১৭ জানুয়ারি ২০২২

আফ্রিকার সবচেয়ে বিপজ্জনক ও ভয়ংকর সাপ ব্ল্যাক মাম্বা

ছবি: ব্ল্যাক মাম্বা

ব্ল্যাক মাম্বা (ইংরেজি Black Mamba) (Dendroaspis polylepis), এলাপিড পরিবারভুক্ত এক প্রজাতির বিষধর সাপ। এটি আফ্রিকার সবচেয়ে বিপজ্জনক ও ভয়ংকর সাপ। আফ্রিকার একটি বড় অঞ্চলজুড়ে এই সাপের বিস্তৃতি লক্ষ করা যায়। ব্ল্যাক মাম্বা দেখা যায় ইথিওপিয়া, কেনিয়া, বতসোয়ানা, উগান্ডা, জাম্বিয়া, জিম্বাবুয়ে, অ্যাঙ্গোলা, নামিবিয়া, মালাউই, মোজাম্বিক, সোয়াজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, এবং কঙ্গোতে। সাভানা অঞ্চল, কাষ্ঠল বণাঞ্চল, এবং শিলাময় অঞ্চলে এদের দেখা যায়। এরা নিজেরা হুমকির সম্মুখীন হলে আক্রমণাত্মক হয়ে যায়, এবং মরণঘাতী দংশন করতে দ্বিধা করে না।

পৃথিবীতে প্রায় তিন হাজার ৪০০ প্রজাতির সাপ রয়েছে। এর মধ্যে এমন কিছু সাপ রয়েছে যাদের ছোবলে মৃত্যুহার শত ভাগের কাছাকাছি। এমনই এক বিষধর, ভয়ংকর একটি সাপ হলো এই ব্ল্যাক মাম্বা।ব্ল্যাক মাম্বা বিশ্বের সবচেয়ে বিষাক্ত প্রজাতির সাপগুলোর মধ্যে একটি।বিশ্বের সবচেয়ে পাঁচটি বিষাক্ত সাপের মধ্যে এই সাপটি নিজের জায়গা করে নিয়েছে।কিং কোবরার পর এটি হলো পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বিষাক্ত সাপ। অর্থাৎ ব্ল্যাক মাম্বা হলো পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম সাপ।একটি পূর্ণ বয়স্ক ব্ল্যাক মাম্বার দৈর্ঘ গড়ে প্রায় ২.৫ মিটার এবং সর্বোচ্চ ধৈর্ঘ ৪.৩ মিটার। ব্ল্যাক মাম্বা থেকে বড় পৃথিবীর একমাত্র প্রজাতির বিষধর সাপটির নাম শঙ্খচূড় বা কিং কোবরা, যা দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের সাপ। আর বনাঞ্চলে দেখতে পাওয়া এই সাপটির অন্যতম একটি এন্ডেমিক বাসস্থান হচ্ছে সুন্দরবন। 

অন্যান্য সরীসৃপের মতোই ব্ল্যাক মাম্বা শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য বাহ্যিক তাপের ওপর নির্ভরশীল। ব্ল্যাক মাম্বা নামটি একটি ভুল পথ নির্দেশনামূলক কারণ, সাপটির ত্বকের সত্যিকারের রং কালো নয়, বরং গাঢ় ধূসর জলপাই রংয়ের। যদিও জীবনের প্রথমভাগে এটিও থাকে না। তবে বয়স বাড়ার সাথে সাথে এই সাপের ত্বকের রং গাঢ় হতে থাকে। এদের নামের সাথে ব্ল্যাক বা কালো যুক্ত হওয়ার কারণ হিসেবে ধারণা করা হয় এদের কুচকুচে কালো মুখকে। এদের মুখের ভেতরটা পুরোটা গাঢ় কালো রংয়ের। 

ব্ল্যাক মাম্বা পৃথিবীর সবচেয়ে দ্রুতগামী সাপ হিসেবে চিহ্নিত। দাবী করা হয় এদের কিছু প্রজাতি ঘন্টায় ১৯.৫ কিলোমিটার বেগে চলাচল করতে পারে।আবার সাপটির আক্রমণাত্মক চালচলনের জন্যও এর রয়েছে বিশেষ খ্যাতি। ব্ল্যাক মাম্বার ছোবলকে মৃত্যুর চুম্বন বলা হয়ে থাকে। যেখানে ১০ হতে ১৫ মিলিগ্রাম বিষ একটি মানুষের প্রাণনাশের জন্য যথেষ্ট, সেখানে এই ব্ল্যাক মাম্বা সাপটির ছোবলে গড়ে প্রায় ১০০ হতে ১২০ মিলিগ্রাম বিষ নিঃসৃত হয়।

ব্রিটিশ প্রাণিবিদ অ্যালবার্ট গ্যানথার ১৮৬৪ সালে প্রথম এই ব্ল্যাক মাম্বা সাপের বৈশিষ্ট্যগুলো ব্যাখ্যা করেন। একটি প্রাপ্তবয়স্ক ব্ল্যাক মাম্বার গায়ের রং হলদে-বাদামি, ধূসর অথবা খাকিও হয়ে থাকে। ব্ল্যাক মাম্বার মাথাটা আকারে বেশ বড়, অনেকটা কফিনের আকৃতির। দেখতে হালকা-পাতলা এই ব্ল্যাক মাম্বা সাপটি বেশ শক্তিশালীও হয়ে থাকে। ব্ল্যাক মাম্বা মাটি থেকে মাথা বেশ খানিকটা ওপরে তুলে চলতে সক্ষম।

ছোটখাটো কোনো কিছু শিকার করলে দেখা যায় এ সাপটি শিকারকে ততক্ষণ জাপটে ধরে রাখে, যতক্ষণ না শিকার নড়াচড়া বন্ধ করে। অর্থাৎ না পরা পর্যন্ত জাপটে ধরে রাখে। কিন্তু বড় কোনো শিকার ধরলে তাকে ছোবল দিয়ে ছেড়ে দেয় ব্ল্যাক মাম্বা। এদের কোনো কান না থাকলেও মাটি থেকে আসা যেকোনো কম্পন এরা খুব সহজেই অনুভব করতে পারে।

গবেষকদের তথ্যমতে, সবচেয়ে বেশি আয়ুষ্কালের ব্ল্যাক মাম্বাটি ১৪ বছর বেঁচে ছিল। কিন্তু গবেষকরা মনে করেন যে সত্যিকার অর্থে ব্ল্যাক মাম্বা প্রজাতিটির গড় আয়ু আরও অনেক বেশি।যুগ যুগ ধরে সাপ নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে গবেষকরা যে সব তথ্য দিয়েছেন তাতে বোঝা যায় এই ব্ল্যাক মাম্বা সাপের শক্তি থেকে বিষ প্রয়োগ সবকিছুই অন্যরকম। 

আর সি