- শুক্রবার ১৭ মে ২০২৪

| জ্যৈষ্ঠ ৩ ১৪৩১ -

Tokyo Bangla News || টোকিও বাংলা নিউজ

ওমিক্রনের মিউটেশন বা পরিবর্তনশীলতা বেশি

টোকিও বাংলা নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১১:২০, ৯ ডিসেম্বর ২০২১

ওমিক্রনের মিউটেশন বা পরিবর্তনশীলতা বেশি

ওমিক্রন বিজ্ঞানের পরিভাষায়  যার নাম বি.১.১.৫২৯।ওমিক্রনের প্রভাব দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গ এবং তার আশপাশের কিছু এলাকাতেই এখনও পর্যন্ত সীমাবদ্ধ। তাছাড়া হংকং, ইসরায়েল এবং আফ্রিকাফেরত কয়েকজন পর্যটকের শরীরেও মিলেছে এই রূপ। গত ১৬ নভেম্বর দক্ষিণ আফ্রিকায় ওমিক্রনে সংক্রমিতের সংখ্যা ছিল ৩০০র কাছাকাছি। ২৫ নভেম্বর তা বেড়ে ১২শ’তে পৌঁছায়। 

জাপানি এক গবেষক  বলেন, করোনাভাইরাসের ওমিক্রনের উদ্ভব সম্ভবত এমন একটি পরিবর্তনের ফলে হয়েছে যা আলফা বা ডেল্টা স্ট্রেইন থেকে পৃথক। 

কেইয়ো বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কোসাকি কেনজিরোর নেতৃত্বাধীন দলটি, বিশ্ব জুড়ে খবর পাওয়া করোনাভাইরাসের বিভিন্ন স্ট্রেইনের জিনগত উপাত্ত বিশ্লেষণ করে আসছে। দলটি ভাইরাসের ধরনগুলোর উৎপত্তি, পরিবর্তন ও প্রভাব নিয়ে গবেষণা করছে।

অধ্যাপক কোসাকি বলেন যে, তিনি ওমিক্রন ধরনের ভৌগলিক উৎপত্তির স্থান নির্ধারণ করতে পারেননি, তবে এটি সম্ভবত এমন একটি এলাকা যেখানে জিনগত বিশ্লেষণ পূর্ণাঙ্গভাবে পরিচালিত হয়নি। তিনি বলেন, সম্ভবত আলফা এবং ডেল্টা ধরন থেকে ভিন্ন কোন স্ট্রেইনের ধারাবাহিক কিছু পরিবর্তনের ফলে এর উদ্ভব হয়েছে।

কোসাকি কেনজিরোর মতে,ওমিক্রনে স্পাইক প্রোটিনে প্রায় ৩০টি পরিবর্তন ঘটেছে যা ডেল্টা এবং অন্যান্য ধরনের চেয়ে তিনগুণ বেশি। উল্লেখ্য, স্পাইক প্রোটিন ভাইরাসের এমন একটি অংশ যেটি মানুষের কোষে আটকে যায় এবং একে আঁকড়ে ধরে রাখে।এর আগে কোনো করোনাভাইরাসের কোনো ভ্যারিয়েন্টের মধ্যেই এত মিউটেশন বা রূপান্তরশীলতা দেখা যায়নি।

তিনি আরও বলেন যে, এছাড়া ওমিক্রন ধরনে এমন একটি এনজাইম সংশ্লিষ্ট জিনগত পরিবর্তনও ঘটেছে, যা ভাইরাসের প্রতিলিপি সৃষ্টিতে সহায়ক হয়।এবং ওমিক্রন গুরুতর উপসর্গের কারণ হয় কিনা, সেটি জানতে আরও বিশ্লেষণের প্রয়োজন রয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালের শেষ দিকে ভারতে শনাক্ত হওয়া করোনাভাইরাসের ডেল্টা রূপ এখন পর্যন্ত বিশ্বের ১৬৩ দেশে সংক্রমণ ছড়িয়েছে। আক্রান্ত হয়েছেন কয়েক কোটি মানুষ। বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ের জন্য দায়ী ছিল এই রূপটি। দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে এখনও পর্যন্ত যতটুকু পরিসংখ্যান পাওয়া গেছে, তাতে ওমিক্রনের পক্ষে ডেল্টার পরিসংখ্যানকে ছোঁয়ার পূর্বাভাস নেই।

ওমিক্রনকে ঘিরে তৈরি হওয়া সাম্প্রতিক উদ্বেগের অবশ্য অন্য একটি কারণ রয়েছে। করোনাভাইরাসের এই রূপটির আবির্ভাব হয়েছে প্রায় ৫০ বার জিনের বিন্যাস বদলের ফলে। আর তার মধ্যে ১০টি গুরুত্বপূর্ণ বদল হয়েছে ভাইরাসটির স্পাইক প্রোটিনের ‘রিসেপ্টর বাইন্ডিং ডোমেন’ এ। স্পাইক প্রোটিনের এই চরিত্র বদল অনেক ক্ষেত্রেই ভাইরাসকে মানবদেহে অনুপ্রবেশে আরও দক্ষ করে তোলে। অভিযোজন ক্ষমতাও বাড়ায়।

প্রসঙ্গত, ডেল্টার ক্ষেত্রে জিনগত বিন্যাস বদল ঘটেছে দু’বার। সে কারণে ডেল্টাকে ‘ডাবল মিউট্যান্ট’ (দ্বি-পরিব্যক্ত) হিসেবে চিহ্নিত করেছিল ‘হু’। আর এক রূপ ‘বিটা’র ক্ষেত্রে জিনগত বিন্যাসের বদল ঘটে তিনবার।

তবে শুধু মানবদেহের সহজাত রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা নয়। ওমিক্রনকে লড়াই করতে হবে করোনা টিকার প্রতিরোধের বিরুদ্ধেও। ডেল্টা রূপের সংক্রমণের সময় বিশ্বজুড়ে টিকাকরণের সংখ্যা ছিল অনেক কম। এখন বিশ্বে টিকাকরণ অনেকটাই এগিয়ে গেছে। ফলে ওমিক্রনের পরীক্ষা আরও কঠিন। তা ছাড়া, গত এক বছরে টিকা সংক্রান্ত গবেষণাও এগিয়েছে অনেকটা।

ফাইজার,বায়োএনটেকের মতো সংস্থা ইতিমধ্যেই  ওমিক্রনের প্রতিরোধী টিকা তৈরির কাজ  শুরু  করেছে।সব মিলিয়ে এক বছর আগে ডেল্টার ঢেউয়ের মোকাবেলার জন্য বিশ্ব যতটা প্রস্তুত ছিল, ওমিক্রন প্রতিরোধে প্রস্তুতি তার চেয়ে বেশি।দক্ষিণ আফ্রিকায় সংক্রমণের হিসাবে ওমিক্রন যদি ডেল্টাকে ছাপিয়ে যায় তবে বিশ্বজুড়েও তাই হবে, এমনটা নয়। যেমন করোনাভাইরাসের আলফা রূপ ইউরোপজুড়ে ছড়িয়ে পড়লেও দক্ষিণ আফ্রিকায় খুব একটা সংক্রমণ ছড়াতে পারেনি।

তুলেন ইউনিভার্সিটির ভাইরাসবিশারদ রবার্ট এফ গ্যারি জুনিয়র বলেন,আমরা এখনও ডেল্টা মহামারির মধ্যে আছি। ওমিক্রন কি ডেল্টাকে পেছনে ফেলে দেবে?

ভাইরাসবিশারদ রবার্ট এফ গ্যারি জুনিয়রের মতে, ডেল্টা বেশ শক্তিশালী একটা ভ্যারিয়েন্ট। এটা খুব বেশি ছড়িয়েছে।ডেল্টার চেয়ে বেশি ছড়ানোর জন্য ওমিক্রনকে তার চেয়েও বেশি বিধ্বংসী হতে হবে।
 

আর সি